MR Admin
09 Dec 2024
26 Nov 2024
খেজুরের গুড় সাধারণত শীতকালে সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশে, এই রস সংগ্রহের মৌসুম সাধারণত অক্টোবরের শেষ বা নভেম্বরের শুরু থেকে শুরু হয় এবং ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থায়ী হয়। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য এই সময়টি আদর্শ, কারণ এই সময়ে আবহাওয়া ঠান্ডা থাকে, যা রসের গুণমান ভালো রাখে।
1. রস সংগ্রহ:
প্রথমে খেজুর গাছের উপরের অংশ পরিষ্কার করে কেটে নেওয়া হয়।
গাছের কাটা অংশে একটি বিশেষ বাঁশের নল বা কলস লাগানো থাকে, যার মাধ্যমে ধীরে ধীরে রস সংগ্রহ করা হয়।
প্রতিদিন রাতে রস সংগ্রহ করা হয় এবং সকালে রস সংগ্রহ করা হয়।
2. রস পরিষ্কার করা:
সংগৃহীত রস প্রথমে ফিল্টার করে পরিষ্কার করা হয়। এতে ময়লা বা অন্য কোনো অবাঞ্ছিত পদার্থ থাকলে তা তুলে ফেলা হয়।
3. রস পোড়ানো:
পরিষ্কার রস একটি বড় পাত্রে ঢেলে দেওয়া হয় এবং একটি খোলা আগুনে পোড়ানো হয়।
রস ঘন করার জন্য, এটিকে একটানা জ্বাল দিতে হবে এবং মাঝে মাঝে নাড়তে হবে যাতে রস পাত্রের নীচে লেগে না যায়।
4. গুড় ঘন করা:
ক্রমাগত গরম করার ফলে রস ঘন হয় এবং একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে এটি গুড়ের রূপ নেয়।
রস থেকে গুড় তৈরি করতে সাধারণত ৩-৪ ঘণ্টা সময় লাগে।
5. গুড় ঢালাই এবং সংরক্ষণ করা:
গুড় তৈরি হয়ে গেলে ছাঁচে ঢেলে দেওয়া হয়।
ছাঁচে সেট হয়ে গেলে, গুড় বিভিন্ন আকারে কেটে সংরক্ষণ করা হয়।
এই প্রক্রিয়ায় খেজুরের রস থেকে গুড় (তরল গুড়) বা শক্ত গুড় তৈরি করা যায়।
খাঁটি খেজুরের গুড় এবং ভেজাল গুড় শনাক্ত করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বা লক্ষণ রয়েছে, যা অনুসরণ করলে সহজেই আলাদা করা যায়। নীচে কিছু সহজ উপায় আছে:
1. গুড়ের রঙ দেখুন:
খাঁটি খেজুরের গুড়: খাঁটি গুড়ের রঙ সাধারণত হালকা বাদামি থেকে গাঢ় বাদামি হয়। এটি মসৃণ এবং সামান্য কম চকচকে।
ভেজাল গুড়: ভেজাল গুড়ের রঙ প্রায়ই খুব উজ্জ্বল বা অস্বাভাবিকভাবে সোনালি, হলুদ বা গাঢ় কালো, যা কৃত্রিম রঙের সংযোজন নির্দেশ করে।
2. স্বাদ:
খাঁটি খেজুরের গুড়: খাঁটি গুড়ের স্বাদ প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি হবে এবং খেজুরের প্রাকৃতিক সুগন্ধ থাকবে।
ভেজাল গুড়: ভেজাল গুড়ের অত্যধিক মিষ্টি, তিক্ত বা সামান্য কৃত্রিম স্বাদ থাকতে পারে, কারণ এতে যুক্ত চিনি বা গ্লুকোজ থাকে।
3. টেক্সচার টেস্ট:
খাঁটি খেজুরের গুড়: খাঁটি গুড় সাধারণত শক্ত এবং সামান্য ভঙ্গুর হয়। এটি সহজেই চূর্ণবিচূর্ণ হয় এবং আঠালো হয় না।
ভেজাল গুড়: ভেজাল গুড় নরম ও আঠালো হয়। এটি সহজে চূর্ণবিচূর্ণ হয় না এবং হাতে কিছুটা আঠালো থাকে।
4. জলে দ্রবীভূত করা:
এক গ্লাস পানিতে এক টুকরো গুড় দিন।
খাঁটি গুড়: খাঁটি গুড় সম্পূর্ণরূপে জলে দ্রবীভূত হবে এবং নীচে কোনও ময়লা বা অবশিষ্টাংশ বসবে না।
ভেজাল গুড়: ভেজাল গুড় সম্পূর্ণরূপে পানিতে দ্রবীভূত হবে না এবং কিছু অবশিষ্টাংশ বা ময়লা নীচে বসতে পারে।
5. গন্ধ:
খাঁটি খেজুরের গুড়: খাঁটি গুড়ের প্রাকৃতিক খেজুরের মতো মিষ্টি এবং মৃদু সুগন্ধ রয়েছে।
ভেজাল গুড়: ভেজাল গুড়ের গন্ধ খুব একটা ভালো হয় না বা কখনও কখনও তীব্র কৃত্রিম গন্ধ থাকে।
6. তাপ পরীক্ষা:
আগুনের কাছে গুড় কিছুক্ষণ ধরে রাখুন।
খাঁটি গুড়: খাঁটি গুড় গলে যাবে, কিন্তু তাতে ফেনা হবে না বা কালো কণা থাকবে না।
ভেজাল গুড়: ভেজাল গুড় তাপে গলে গেলে ফেনা হতে পারে, যা ভেজাল চিনির উপস্থিতি নির্দেশ করে।
7. মূল্য নির্ধারণ:
খাঁটি খেজুর গুড়: খাঁটি গুড় সাধারণত বেশি ব্যয়বহুল, কারণ এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এবং তৈরি করতে আরও সময় এবং প্রচেষ্টা লাগে।
ভেজাল গুড়: ভেজাল গুড়ের দাম অনেক সময় কম হয়, কারণ এতে চিনি বা অন্যান্য উপাদান মেশানো হয়।
8. দীর্ঘমেয়াদী স্টোরেজ:
খাঁটি খেজুরের গুড়: খাঁটি গুড় দীর্ঘ স্টোরেজের পরেও রঙ এবং স্বাদে স্থিতিশীল থাকে।
ভেজাল গুড়: ভেজাল গুড় কিছু দিন পরে রঙ পরিবর্তন করে এবং আঠালো হয়ে যেতে পারে বা স্বাদে পরিবর্তন হতে পারে।
এই টিপসগুলি অনুসরণ করে, আপনি সহজেই খাঁটি এবং ভেজাল গুড়ের মধ্যে পার্থক্য বলতে পারবেন।